না ফেরার দেশে কথাসাহিত্যের বাতিঘর কবি-সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত
জালালউদ্দিন সাগর: আজন্ম শব্দের সাথে বসবাস তাঁর। বেড়ে ওঠা, সংসার। মানুষের ভেতরের মানুষটাকেও খুঁজে আনেন শব্দের গাথুঁনীতে। হোক সে কবিতায়, প্রবন্ধে কিংবা আত্মশুদ্ধির আলোচনায়। নব্বই বছর বয়সে জীবনের ইতি টানলেন কথাসাহিত্যের সেই বাতিঘর কবি-সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত।
আজ ১০ জুলাই, শনিবার বেলা ১২টা ২০ মিনিটে পটিয়ার ধলঘাটে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অরুণ দাশগুপ্ত ছিলেন প্রাবন্ধিক, সম্পাদক এবং কবি। শব্দ ও বোধ যোজনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রার একজন মানুষ তিনি। তাঁর সৃষ্টির প্রতিটিতে জড়িয়ে ছিলো মানবিক আকুলতা। ছিলো মমতা আর মমত্ববোধের প্রগাঢ় গাঁথুনি। তরুণ উদ্যোমের স্বপ্ন ছোঁয়ার ব্যাপ্তি কেবল সেই শব্দতে ঘিরেই। হোক তা প্রবন্ধে, কবিতা কিংবা সাংবাদিকতায়।
অরুণ দাশগুপ্ত জন্মেছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাটে। ১৯৩৬ সালে। বাবা অবিনাশ চন্দ্র দাশগুপ্ত এবং মা হেমপ্রভা দাশগপ্ত। ৯০ বছরে এসেও সংসারী হননি তিনি। প্রণয় ও সংসার ছিলো কবিতার সাথেই।
স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই কবিতা আর প্রবন্ধ, গল্প লেখা শুরু হয় কলেজে উঠার পর। লেখক হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনেই প্রথম নাম ছাপা হয় তাঁর।
পটিয়ার ধলঘাটে পাঠশালার হাতেখড়ি অরুণ দাশ গুপ্ত’র। তারপর চলে যান কলকাতায়। সেখানের কালাধন ইনস্টিটিউশন, সাউদার্ন থেকে মাধ্যমিক এবং স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। তার পর বিশ্বভারতী লোকশিক্ষা সংসদ। কলকাতার দৈনিক লোকসেবক পত্রিকার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতার জীবন শুরু তাঁর। এরপর ফিরে আসেন দেশে। স্বাধীনতার পর মাহবুব উল আলম চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায় সহ সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে যুক্ত হন সহ সম্পাদক পদে। সহযোগী সম্পাদক হিসেবে অবসর নিলেও অরণ দাশগুপ্তকে আমৃত্যু সহযোগী সম্পাদক হিসেবে পদে রেখেই সম্মানিত করেছে আজাদী কতৃর্পক্ষ।
অরুণ দাশগুপ্তের উল্লেখযোগ্য দুটি গ্রন্থ হলো, বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ ‘রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য’ এবং যুগপথিক কবি নবীন চন্দ্র সেন’র জীবন পরিচয় কবিতার ও গদ্যগ্রন্থের আলোচনা ভিত্তিক গ্রন্থ। তাঁর সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ‘আপাতত’ প্রথাবিরোধী সাহিত্য আন্দোলনে অন্যবদ্য ভূমিকা রেখেছিলো।
অরুণ দাশগুপ্তের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য’ গ্রন্থটি কবি সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথের বিচিত্রমুখী স্রষ্টা জীবনের একটি অনন্য সাধারণ দিককে তুলে ধরেছে; সেটি হলো তাঁর সঙ্গীত-সৃষ্টি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ক্লিক ম্যাগাজিন কতৃর্ক চট্টলার বীর-২০১৮ সম্মাননাসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যে ক্ষণজন্মা গুণী এই সাহিত্যিক।
কথা সাহিতের পুরোধা এই ব্যক্তিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক রাশেদ রউফ বলেন, বড্ড ক্ষতি হয়ে গেলো আমাদের। অরুণ দাশগুপ্তের মতো পণ্ডিতজন চট্টগ্রামে আর জন্মাবে কিনা সন্দেহ আছে।
তিনি আরও বলেন, বর্ষিয়ান এই পণ্ডিতের প্রয়াণে আজাদী পরিবারসহ ব্যক্তিগতভাবে আমিও শোকাহত। অরুণ দাশগুপ্তের মতো বিজ্ঞস্বজন সমাজে বিরল।