theclickmagazine

ঈদের অবসরে প্রাণ জুড়াতে

ক্লিক প্রতিবেদক :: সীতাকু- : চট্টগ্রামের  মূল শহরে প্রবেশের আগেই সীতাকু-। বাসে বসেই   দেখা যায় সুন্দর পাহাড়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ জায়গাটির গুরুত্ব অনেক। রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীর অন্যতম পটভূমি সীতাকু-। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ স্থান কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির। রয়েছে সহ¯্রধারা আর সুপ্ত ধারা নামের দু’টি জলপ্রপাত। মীরসরাই অংশে রয়েছে খৈয়াছড়া, হরিণমারা, হাটুভাঙ্গা, নাপিত্তাছড়া, বাঘবিয়ানী, বোয়ালিয়া, অমরমানিক্যসহ আরও অনেক অনেক ঝরনা ও জলপ্রপাত। এছাড়া প্রায় ১২শ’ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির।

বারো আউলিয়ার মাজার : প্রাচীন বাংলায় এ অঞ্চলে ধর্মপ্রচারক হিসেবে আগমন ঘটে বারো ভূঁইয়ার। বারো আউলিয়ার মৃত্যুর পর তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে গড়ে ওঠে বারো আউলিয়া মাজার।

মিলিটারি একাডেমি : বিএমএ বা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি অবস্থিত ভাটিয়ারিতে। সারাদেশ থেকে আসা নবীন মিলিটারি সদস্যদের এখানেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়ঘেরা লেকের কারণে দর্শনার্থীদের কাছে এই জায়গাটি অন্যরকম আবেগ রয়েছে।

কৈবল্যধাম : চট্টগ্রাম শহরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পুরনো ও সুবিশাল র্তীথস্থান হচ্ছে কৈবল্যধাম। এটি পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত।

রাণী রাসমণি বীচ : প্রায় বছর তিনেক ধরে এটি জমে উঠেছে। পর্যটকরা এ স্পটটির কথা এখনও  তেমন একটা জানেন না। মূলত স্থানীয় জনগণ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষজনই এখানে অবকাশযাপন করতে আসে। কর্ণফুলী নদীর তীরে বিশাল এরিয়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এটি। এছাড়া এখানে রয়েছে সুন্দর একটি ঝাউবন।  

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত : সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে দ্বিতীয় কক্সবাজার হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পৌঁছার আগে চোখে পড়বে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে ঝাউগাছের সারি। যা কক্সবাজারের কথা মনে করিয়ে দেবে।

ফয়স লেক : বন্দরনগরীর অন্যতম আকর্ষণ ফয়’স লেক। স্থাপিত হয়েছে ১৯২৭ সালে। তৎকালীন বৃটিশ শাসনামলে  রেলকর্মীদের পানির চাহিদা   মেটানোর লক্ষ্যে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে এলাকাটি। কেউ কেউ এটাকে প্রাকৃতিক লেক ভেবে ভুল করে। আসলে এটি কৃিত্রম লেক। পানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে বিনোদনকেন্দ্র।  

বাটালি পাহাড় : টাইগার পাস এবং লালখান বাজারের মাঝামাঝি অবস্থান বাটালি পাহাড়ের।  চট্টগ্রামের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই টাইগার পাস আসতে হবে এবং বাটালি পাহাড়ে উঠতে হবে।

ওয়্যার সিমেটট্রি : নগরীর প্রবর্তক মোড় পেরিয়ে বাদশা মিয়া রোডে এর অবস্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একাংশ এখানে সমাহিত করা হয়েছে। ফুলের বাগান বেষ্টিত মনোরম এ স্থান স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব সৈন্যদের বীরত্বগাথা।

পারকিচর : চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরেই এটির অবস্থান। আনোয়ারা থানায় গড়ে ওঠা এ নয়ন জুড়ানো সমুদ্র সৈকত তেমন একটা পরিচিতি পায় নি। সৈকতের পাড় ঘেঁেষ পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ঝাউবন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস : এটি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি অদ্বিতীয়। নৈসর্গিক সৌন্দর্যম-িত পাহাড়ের উপরে স্থাপিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। দুইপাশে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা যমজ পাহাড়, মাঝখানে পাহাড়ের বুক চিরে চলে  গেছে সরু রাস্তা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ শাটলট্রেন। একমাত্র চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের আর কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল  ট্রেনের ব্যবস্থা নেই।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা : ১৯৮৯ সালে তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। ৬ একর জায়গার উপর বানর, সিংহ, হরিণ ও হনুমান এই চারপ্রজাতির ১৬টি প্রাণী নিয়ে যাত্রা শুরু  হলেও বর্তমানে এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে দ্ইু শতাধিক প্রজাতির পশুপাখি ।

কক্সবাজার : ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজারে সৈকত সংলগ্ন অনেকগুলো পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢেউ। আরও অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে। সৈকত সংলগ্ন আকর্ষণীয় এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনানী সমুদ্র সৈকত; যা কক্সবাজার থেকে ৩৫ কি.মি দক্ষিণে অবস্থিত। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এ সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত।

টিলাগড় : সুন্দর ছায়াময় পরিবেশে আড্ডা দিতে বা হেটে বেড়াতে হলে যেতে হবে টিলাগড়। যাওয়ার পথে চোখে পর্বে সিলেট পলিটেকনিক, গবাদি পশু উন্নয়ন ফার্ম, ছোট বড় পাহাড় আর শেষ সীমানায় আছে গ্যাস ফিল্ড। এখানে একটি ছোট চা বাগান ও আছে

মালনীছড়া : দেশের সবচেয়ে প্রাচীন চা বাগান মালনীছড়া ও লাক্কাতুড়া চা বাগান অপরূপ সাজে সজ্জিত, যা আপনার চোখে ও মনে প্রশান্তি এনে দেবে । মালনীছড়া এবং লাক্ষাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়িতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ।

মাধবকু- : মাধবকু- ঝরনার জন্য বিখ্যাত। বর্ষার সময়ে একটু বিপজ্জনক হয়ে যায় বন্যা আর জোঁকের কারণে। তবে শীতকালে ঝরনার পানি কমে যায় অনেক। মাধবকু-ের মাগুরছড়াতে পরিত্যক্ত গাস ও তেল খনি আছে। রাবার ও লেবুর বাগানও দেখতে পাওয়া যায়।
জাফলং : জাফলংয়ে শীত ও বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন। বর্ষায় জাফলংয়ের রূপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে ওঠে। জাফলং সিলেট শহর থেকে ৬৬ কি.মি. দূরে অবস্থিত। জাফলং এ আপনি দেখবেন চা বাগান ,খাসিয়া পুঞ্জি ও খাসিয়া রাজ বাড়ি এবং বল্লা ঘাট এ পাথর তুলার দৃশ্য পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। আর জাফলং গেলে সাথে এক জোড়া শুকনো কাপড় নিয়ে যেতে হবে। কারণ ওখানকার শীতল পানিতে একটু গোসল করার ইচ্ছা দমিয়ে রাখা কষ্ট।

শ্রীমঙ্গল : বাংলাদেশের চা শিল্পের রাজধানী ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ির শ্রীমঙ্গল। কার্পেটের মতো সাজানো চা বাগান সবদিকে। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চা বাগান সহ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট ও অনেকগুলো প্রসেসিং প্লান্ট আছে। চা পাতা থেকে চা প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত পুরোটুকু দেখতে চাইলে ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখা যায়।

লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট : শ্রীমঙ্গল থেকে আপনি রিকশায় বা গাড়িতে যেতে পারেন বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনে।  ঘন জঙ্গলের ফাঁকে প্রচুর বানর এবং পাখি দেখতে পাওয়া যায়। বনে বাঘ, অজগর, হরিন দেখতে পাওয়া যায় বলে শোনা যায়। চাইলে এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করে আসতে পারেন।

রাতারগুল : রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টটি ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। বর্ষায় রাতারগুল দেখতে সুন্দর। কিন্তু এ সময় জোঁক আর সাপের প্রকোপ বেশি। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যাঁরা সাঁতার জানেন না, সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন। বনে ঢুকে পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো। কারণ বিষাক্ত সব সাপ এখানে আপনমনে ঘুরে বেড়ায়। ঈদের ছুটিটা মনের মতো করে কাটাতে এখানেও ঘুরে আসতে পারেন।

গজনী অবকাশ কেন্দ্র, শেরপুর : শেরপুর জেলা শহর থেকে চব্বিশ কিলোমিটার দূরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনীতে অবস্থিত। এখানে গেলে অবকাশযাপনের দিনগুলোতে পেতে পারেন অন্যরকম ভালো লাগার এক আবেশ।  

দর্শনীয় এসব স্থানে যেতে হলে আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হবে। ভ্রমণ গাইড ও ইন্টারনেট থেকে খোঁজ নিতে হবে এসব স্থানে ভ্রমণে আপনাকে কি কি করতে হবে তার তথ্যসমূহ। কোনোভাবেই খোঁজখবর না নিয়ে বের হওয়া উচিত হবে না।

ছবিয়াল : আকমল রাউয়ী

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •