theclickmagazine

একটি আন্দোলনের নাম ‘জিয়াউল হক’ !

আসিব রাইহান :: জিয়াউল হক তাঁর বাবাকে বললেন ‘বাবা আমি পঞ্চম শ্রেণীতে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছি। ক্লাস সিক্সের জন্য নতুন বই দরকার । তিনি বললেন, ‘সর্বমোট তিন টাকা দুই আনা খরচ হবে’।তিন টাকা দুই আনা-অৎকে উঠলেন বাবা। বললেন, ‘চালের দাম বাড়তি। বই কিনে দেবার মত সামর্থ্য আমার নাই। তার চেয়ে ভালো তুমি দোকানে বসো ।

জিয়াউলের পড়ালেখার সেখানেই ইতি। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বাবার কথা শুনে তিনি শুরু করলেন দইয়ের ব্যাবসা। সালটা ১৯৫৬। লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবার পর এই উপলব্ধি তাঁর মধ্যে প্রবল হয়ে দেখা দিলো যে, অর্থের অভাবে যারা বই কিনতে পারে না তাদের জন্য কিছু করতে হবে।নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন জিয়া । গ্রামের কোনো ছেলেকে তিনি অর্থের অভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে দেবেন না আর। 

১৯৬০ সাল থেকে তিনি বই কেনা শুরু করেন। অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি কিনতে শুরু করেন বিভিন্ন ক্লাসের পাঠ্যবই। যে সব দরিদ্র ছেলে-মেয়েরা অর্থের অভাবে বই কিনতে পারে না তাদের হাতে নতুন বই তুলে দিলেন তিনি।

কিন্তু শর্ত দুই- বই গুলো যতœ করে রাখতে হবে এবং পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাঠ্যবই গুলো ফেরত দিতে হবে লাইব্রেরীতে। এভাবেই তিনি ১৯৬৯ সালে গড়ে তোলেন লাইব্রেরী। নাম দেন ‘জিয়াউল হক পারিবারিক পাঠাগার’।

ক্রমেই গ্রামবাসীর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন প্রাইমারীতে লেখাপড়া বন্ধ হওয়া জিয়াউল হক নামের শিক্ষানুরাগী এই মানুষটি। শিক্ষার আলোকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে আনন্দিত হন তিনি।গ্রামের সবার কাছে তিনি এক বিস্ময় পুরুষ। কারণ, এতো অল্প শিক্ষিত মানুষ হয়েও তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অকল্পনীয়। অনেকেই তাঁর লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কাউকে কাউকে অগোচরে পরীক্ষার ফর্ম পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও দেন তিনি। বর্তমানে তাঁর লাইব্রেরীর সর্বমোট বই বিশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাপিডিয়া থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ,বঙ্কিম, জিবনানন্দ, আহমদ ছফা এছাড়াও আছে জুলভার্ন, লিও তলস্তয়ের মত বিদেশী সব সাহিত্যের বই। আছে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবইসহ প্রশাসনের বইও।
জিয়াউলের উদ্যোগ দেখে লাইব্রেরীতে অনুদান দেয় ফ্রিডম ফাউণ্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের মত কিছু সংস্থা। তবুও সেবার ক্ষুধা মেটে না জিয়াউলের। গ্রামের দরিদ্র জনগণের জন্য তিনি আরও করে যেতে চান। তিনি বলেন,ঝড় নয়- বৃষ্টিতেই ফুল বেড়ে ওঠে তরতর করে।

একাত্তর বছর বয়সি এই মানুষটি এখন একটি আন্দোলনের নাম। যার জ্বেলে দেওয়া আলোয় আজ থেকে শত বর্ষ পরেও আলোকিত হবে লাখো মানুষ। চাঁপাই নবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী বটতলা গ্রাম আজ আলোকিত। বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে জিয়াউলের মত আলোকিত, ধুমকেতুর ন্যায় মানুষ চাই-এমন দাবী গ্রামবাসীর।

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •